খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা

অঞ্জলি ৩

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - NCTB BOOK

 

 

প্রিয় শিক্ষার্থী,

 

অঞ্জলি ৩-এ তোমরা কয়েকটি নতুন অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছ। তোমাদের কাছে প্রতিটি উপহার কিছু মজার অভিজ্ঞতা দেবে যার মাধ্যমে তোমরা ত্যাগ ও সেবার মাধ্যমে সমাজকে উন্নয়ন করার একটি পূর্ণ ধারণা পাবে। এই অঞ্জলিতে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির (ফাদার চার্লস জে ইয়াং, মিস এলেন আর্নল্ড ও গ্রেটা থুনবার্গ) জীবনী এবং সেবামূলক কাজে তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে। তোমরাও কিছু বাস্তব অভিযানের মুখোমুখি হবে যাতে তোমরাও ভবিষ্যতে সমাজের কল্যাণে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা কাজ করতে পারো। সেইসঙ্গে খ্রীষ্ট ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে সহমর্মিতায় উজ্জীবিত হয়ে মানুষ, প্রকৃতি ও সমাজের কল্যাণে নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রাখতে পারো।

 

 

Content added || updated By

চলো পরিদর্শন করতে যাই

অভিজ্ঞতা ১

উপহার ৩৭

চলো পরিদর্শন করতে যাই

 

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, এই সেশনে তোমাদের শিক্ষক স্কুলের আশপাশের এলাকায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে নিয়ে যাবেন। আশা করি তুমি খুব আনন্দিত হয়েছ যে একটি নতুন অভিযানে যুক্ত হচ্ছো এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছ।

 

পরিদর্শনের দিন

 

তোমার শিক্ষক যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবে তোমরা প্রস্তুত হয়ে আসবে। শিক্ষক যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানে তোমরা সুশৃঙ্খলভাবে থাকবে। তুমি যে বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে যাচ্ছ, তাঁর ত্যাগ ও সেবার কাজগুলো তুমি ভালোভাবে দেখবে। সুযোগ পেলে তার সাক্ষাৎকার নিবে। তিনি কীভাবে সমাজের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং তাঁর জীবনে এই সেবা কাজের জন্য কী কী ত্যাগ করতে হয়েছে জেনে নিবে। সাক্ষাৎকারের সুযোগ না পেলে তার প্রতিষ্ঠান বা বাড়ির সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিবে। তার জীবনী নিয়ে যদি কোনো বই বা প্রকাশনা থাকে সেখান থেকেও তথ্য সংগ্রহ করবে। তোমাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাতা ও কলম নিবে যেন তোমরা তথ্যগুলো লিখতে পারো। পরিদর্শন শেষে বিশিষ্ট ব্যক্তি বা তার পরিবারকে ধন্যবাদ জানাও। এরপর শিক্ষকের নির্দেশমতে সুশৃঙ্খলভাবে ফিরে আসবে।

পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষককে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।

Content added || updated By

পোস্টার পেপারে লিখন

উপহার ৩৮

পোস্টার পেপারে লিখন

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক তোমাদের কোনো একজনকে সেশনের শুরুতে প্রার্থনা করতে বলতে পারেন, তাই প্রস্তুত থেকো।

এই সেশনে শিক্ষক তোমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে তোমাকে জোড়ায় কাজ দিবেন। বিগত পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জোড়ায় আলোচনা করে পোস্টার পেপারে লিখবে এবং উপস্থাপন করবে। শিক্ষক তোমাকে পোস্টার পেপার ও লেখার প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করবেন।

 

পোস্টার তৈরি

শিক্ষার্থী, আশাকরি তুমি তোমার একজন সহপাঠীকে পোস্টার তৈরির কাজে তোমার সঙ্গে পেয়েছ। তোমরা বিগত সেশনে যে বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছ সে বিষয়ে দুজন মিলে আলোচনা করো। আলোচনার পর তিনি জীবনে ত্যাগস্বীকার করে যে সেবার কাজগুলো করেছেন, সে বিষয়ে কমপক্ষে ছয়টি বিষয়ের তালিকা তৈরি করো।

 

 

 

ছয়টি বিষয়ের তালিকা

১. বিশিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় (মুক্তিযোদ্ধা/ মিশনারি/লেখক/ কবি/ ডাক্তার, ইত্যাদি) 

২. সেবা কাজের উদ্দেশ্য 

৩. সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা 

৪. সেবামূলক কাজ করার উৎসাহের কারণ 

৫. সেবা কাজের বিবরণ 

৬. সেবা কাজের জন্য ত্যাগস্বীকারসমূহ

 

তোমাদের লেখার জন্য ইতোমধ্যে পোস্টার পেপার ও মার্কার পেন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এবার ব্যবহার করো। ছয়টি বিষয় ছাড়াও যদি অতিরিক্ত কোনো বিষয় তোমরা খুঁজে পাও সেগুলোও লিখে রাখো। লেখা শেষ হয়ে গেলে তোমাদের তৈরি পোস্টার পেপারগুলো শিক্ষকের কাছে জমা দাও। শিক্ষক তোমাদের সেবা কাজের এই তালিকাগুলো উপস্থাপন করতে বলবেন। উপস্থাপনার জন্য তুমি প্রস্তুত থেকো।

 

পোস্টার পেপার উপস্থাপন

 

তোমাদের শিক্ষক সামনে ডাকলে তার কাছ থেকে পোস্টার পেপারটি নিয়ে নির্ধারণ করে বা দেওয়ালে মাস্কিং টেপ দিয়ে ঝুলিয়ে দাও। তোমাদের প্রতিটি দলকে শিক্ষক সময় দেবেন। ঐ সময়ের মধ্যে তোমাদের উপস্থাপন করতে হবে। এরপর প্রতিটি সেবাকাজের বিবরণ বর্ণনা করো এবং তোমার কী ধারণা হয়েছে প্রকাশ করো। ছয়টি বিষয় ছাড়াও যদি অতিরিক্ত কোনো বিষয় তোমাদের চোখে পড়ে তোমরা সেগুলোও লিপিবদ্ধ করবে।

উপস্থাপনা শেষ হলে তোমাদের পোস্টার পেপারগুলো সংগ্রহ করে শিক্ষককে জমা দাও।

মনে রেখো, যে বিষয়গুলো তুমি পোস্টার পেপারে লিখেছ তা অতি মূল্যবান। তাই জমা দেওয়ার পূর্বে পোস্টার পেপারে লিখিত বিষয়গুলো তোমার নোটবুকে রেকর্ড করে রেখো।

সেশন শেষে তোমার শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দাও।

Content added || updated By

আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যকে সেবা

উপহার ৩৯-৪০

আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যকে সেবা

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানাও। শিক্ষক একটি গান এবং প্রার্থনা দিয়ে শুরু করবেন।

বরষ আশিষ বারি (আজি) 

অবিরত ধারে যীশু সবার উপরি।

১. কি উপহার দিব আজি, গুণধাম, 

এই এনেছি ভগ্ন চিত্ত হল পাপহারি।

২. জ্বাল প্রেম-অগ্নি সকল হৃদয়ে, 

সবে পরসেবা তরে যেন প্রাণ দিতে পারি 

৩. তব বলে কর সবে বলবান, 

মোরা জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি। 

৪. পূর্ণ কর সবে পবিত্র আত্মায়, 

যেন জগতেরে তব প্রেমে মাতাইতে পারি।

 খ্রীষ্ট সংগীত ১৫৪

 

এ সেশন দুটিতে শিক্ষক তোমাদের এবার আরও গভীরভাবে সমাজের কল্যাণে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা করার মনোভাবের উপর পবিত্র বাইবেল থেকে এবং একজন ঐতিহাসিক মহান ত্যাগী মিশনারির বিষয়ে আলোচনা করবেন। তার জীবনের গল্পের মাধ্যমে তোমরা খুঁজে পাবে কীভাবে নিজের জীবনের সুখ ও বিলাসিতাকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে বসবাস করে সেবাদান করেছেন।

 

পবিত্র বাইবেল পাঠ

 

শিক্ষক তোমাদের মধ্যে একজনকে পবিত্র বাইবেল থেকে ২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ পড়তে বলবেন।

প্রেরিত পৌলের কষ্টভোগ ও ত্যাগ

২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ

 

আমি আবার বলি, কেউ যেন আমাকে বোকা মনে না করে। অবশ্য যদি তোমরা তা-ই মনে করে থাক তবে বোকা হিসাবেই আমাকে গ্রহণ কর, যেন আমি একটুখানি গর্ব করতে পারি। আমি এখন যা বলছি তা প্রভুর আদেশ মত বলছি না, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে গর্ব করতে গিয়ে বোকার মতই বলছি। মানুষ যা নিয়ে গর্ব করে, অনেকেই যখন তা নিয়ে গর্ব করছে তখন আমিও করব না কেন? তোমরা জ্ঞানী বলে খুশী হয়ে বোকাদের সহ্য কর। শুধু তা-ই নয়, যদি কেউ তোমাদের দাস বানায়, তোমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, তোমাদের ফাঁদে ফেলে, তোমাদের মনিব হয়ে দাঁড়ায় কিম্বা তোমাদের গালে চড় মারে, তোমরা সেই সবও সহ্য কর। আমি লজ্জার সংগে স্বীকার করছি যে, এই সব ব্যাপারে আমরা তোমাদের প্রতি দুর্বল ছিলাম।

যা নিয়ে অন্যেরা গর্ব করতে সাহস করে আমিও তা নিয়ে গর্ব করতে সাহস করি; এই কথা আমি বোকার মতই বলছি। যারা গর্ব করে তারা কি ইব্রীয়? আমিও তা-ই। তারা কি ইস্রায়েলীয়? আমিও তা-ই। তারা কি অব্রাহামের বংশধর? আমিও তা-ই। তারা কি খ্রীষ্টের সেবাকারী? আমি আরও বেশি করে তা-ই। মনে রেখো, আমি মাথা- খারাপ লোকের মত কথা বলছি। খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি তাদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি, আরও অনেক বার জেল খেটেছি, আরও অনেক বার মার খেয়েছি, অনেক বার মৃত্যুর মুখে পড়েছি। যিহুদীদের হাতে পাঁচ বার আমি উনচল্লিশ ঘা চাবুক খেয়েছি, বেত দিয়ে তিন বার আমাকে মারা হয়েছে। এক বার আমাকে পাথর মারা হয়েছিল। তিন বার আমার জাহাজ-ডুবি হয়েছিল। একদিন ও একরাত আমি সমুদ্রের জলের মধ্যে ছিলাম। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। বন্যা, ডাকাত, নিজের জাতির লোক এবং অযিহুদীদের দরুণ আমি বিপদে পড়েছি। তা ছাড়া শহরে, মরু-এলাকায়, সমুদ্রে এবং ভণ্ড ভাইদের মধ্যেও আমি বিপদে পড়েছি।

খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি কষ্টের মধ্যেও কঠিন পরিশ্রম করেছি। আমি অনেক রাত জেগেছি, খিদে ও পিপাসায় কষ্ট পেয়েছি, না খেয়ে থেকেছি, ঠান্ডায় ও কাপড়-চোপড়ের অভাবে কষ্ট পেয়েছি। বাইরের এই সব ব্যাপার ছাড়াও সব মণ্ডলীগুলোর জন্য রোজই আমার উপর চিন্তার চাপ পড়ছে। কেউ দুর্বল হলে আমি কি তার দুর্বলতার ভাগী হই না? কারও দরুন কেউ পাপে পড়লে আমি কি অন্তরে জ্বালা বোধ করি না?

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

 

প্রেরিত পৌল একজন সাহসী প্রচারক, যিনি যীশু খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুও গ্রহণ করতে সব সময় প্রস্তুত থাকতেন। তিনি যদিও এক সময় শিক্ষিত ফরিসী ছিলেন এবং তার বাবা একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন তারপরও যীশুখ্রীষ্টের জন্য তিনি তার ধনসম্পদ ছেড়ে সুসমাচার প্রচার করার জন্য সমস্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। আমরা ২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ পেড়েছি, যেখানে পৌল তার কষ্টভোগের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি এই দুঃখভোগ সহ্য করেছেন শুধু মানুষকে মুক্তির পথ দেখাবার জন্য। প্রেরিত পৌল তার জীবনের সমস্ত আনন্দ ও সুখভোগ ত্যাগ করে শুধু যীশুখ্রীষ্টের কথা প্রচার করার জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কষ্টভোগ করেছেন। তিনি চার্চগুলোর জন্য চিন্তা করতেন এবং যখন কেউ কষ্টে জীবন যাপন করতো তিনিও তখন কষ্ট পেতেন। আমাদের জীবনে যখন আমরা অন্যের কষ্ট দেখি তখন তাদের জন্য আমাদেরও দুঃখভোগ করা উচিত। তাদের কষ্টের সঙ্গে এক হয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দরকার। এই সময় একজন মহীয়সী নারীর জীবনী আলোচনা করব যিনি নিজের আরাম- আয়েশ ত্যাগ করে মানুষের সেবা করে গেছেন।

 

জন্ম ও আহ্বান

 

মিস এলেন আর্নল্ড ৫ জুলাই ১৮৫৮ সালে এস্টন, ওয়ারউইকশ্যায়ার, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলফ্রেড আর্নল্ড একজন জুয়েলারী ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মা জেইন সপরিবারে ১৮৭৯ সালে অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হন। মিস আর্নল্ড, ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট ব্যাপ্টিস্ট চার্চে ১১ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন। সেই চার্চের পালক রেভা, সাইলাস মিড-এর অনুপ্রেরণায় তিনি প্রথম মানবসেবা কাজের জন্য উৎসাহিত হন। তিনি মেডিকেল ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং অ্যাডিলেড হাসপাতালের দুইজন নার্সকে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, কলেরা এবং গুটিবসন্ত রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেন। ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে তার বান্ধবী ম্যারি গিলবার্টসহ প্রথমে কলকাতায় আসেন। কলকাতা ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির ভাষা স্কুলে বাংলা ভাষা শিখেন। এরপর মিস আর্নল্ড ও মিস গিলবার্ট প্রথম ফরিদপুরে আসেন, কিন্তু তার পূর্ববঙ্গের আবহাওয়া সহ্য হচ্ছিল না বিধায় তিনি ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যান। ১৮৮৫ সালে তার সঙ্গে আরও নারী মিশনারি সদস্যদের নিয়ে তিনি পুনরায় পূর্ববাংলায় ফিরে আসেন।

 

ত্যাগ ও সেবার মহিমা

 

মিস এলেন আর্ণল্ড ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে আরও নারী মিশনারি সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লা জেলায় প্রথম সেবা কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির পক্ষে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ত্রিপুরার মহারাজার কাছ থেকে একটি জমি কিনে সেখানে একটি ইটের দালানের মিশন হাউস তৈরি করেন। একজন নারী বিদেশিনী হয়ে বার্জে করে, কয়লা আনিয়ে সেই জ্বালানি দিয়ে ইটের ভাটায় ইট পুড়িয়ে দালান তৈরি করেন। তিনি ১৮৯১-৯২ খ্রীষ্টাব্দে যখন অস্ট্রেলিয়ায় ছুটিতে ছিলেন তখন দালানের কাজ শেষ হয় কিন্তু সেই বাড়িতে তিনি ফিরে আসতে পারেননি। ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি সরাসরি পাবনাতে আসেন এবং নারীদের মধ্যে শিক্ষা চিকিৎসা ও প্রচার কাজ শুরু করেন। পাবনায় মিশনারিদের কোনো থাকার ঘর ছিল না। মিস আর্ণল্ড একটি ভাড়া বাসায় থেকে স্বাস্থ্য সেবা দিতেন। এর পাশাপাশি তিনি তার বন্ধুদের কাছে অর্থের জন্য চিঠি লিখতে থাকলেন যাতে পাবনাতে একটি মিশন হাউস তৈরি করতে পারেন। তার প্রার্থনা ও অক্লান্ত চেষ্টায় তিনি মিশন হাউস তৈরির টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন এবং ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে একটি মিশন বাড়ি তৈরি করেন যেটি জেনানা হাউস নামে পরিচিত (প্রকৃত নাম John Price House)। ঐ বাড়িটিতে তিনি দুঃস্থ মহিলাদের জন্য আশ্রম তৈরি করেছিলেন। মিস আর্ণল্ডের সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবায় যোগ দিয়েছিল ডা. চার্লস হোপ এবং তার স্ত্রী ডা. লারা হোপ। ১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে তিনি পাবনার দাশুরিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাণ এবং কুচলিয়া বিলের কৃষকদের বীজ দিয়ে সাহায্য করেছেন। কুচলিয়াতে একটি মিশন স্টেশন করে সেখানে একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি বালক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

 

এই পরিশ্রমী আর্তমানবতার সেবায় রত কুমারী বিদেশিনী ভীষণভাবে চেয়েছিলেন পাবনার জেনানা হউস থেকে স্বাস্থ্যসেবা করে যাবেন। পরবর্তীকালে তাকে নিজের প্রচেষ্টায় অর্থ সংগ্রহ করে বাড়ি করা জেনানা হাউসে থাকতে দেওয়া হয়নি। তার একটি বড় কারণ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি তাকে পেনশন গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল এবং মিশন হাউস ছেড়ে অন্য স্থানে যেতে আদেশ করেছিল। সেই দিন তিনি একা মিশন হাউস থেকে চোখের জলে বের হয়ে যান এবং একটি খোলা গরুর গাড়িতে চড়ে ১২ মাইল পথ অতিক্রম করে আভাইকোলা মিশন স্টেশনে চলে আসেন। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে মিস আর্নল্ড আতাইকুলা এবং বেড়া এই দুই স্থানে সেবাকাজ শুরু করেছিলেন। এই দুই অঞ্চল জলাশয় ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও শুকনো মৌসুমে কলেরার প্রাদুর্ভাব প্রচণ্ড ছিল। তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। পরবর্তীকালে আতাইকুলাতে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই কেন্দ্র থেকে তিনি প্রতিদিন বিনামূল্যে রোগী দেখতেন এবং নামমাত্র মূল্যে ঔষধ দিতেন। মিস আর্ণল্ড কয়েক রকম ওষুধের মিক্সার গরম পানিতে ফুটিয়ে কাচের শিশিতে ভরে রাখতেন। অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর ছিলো বলে ওষুধের নাম পড়তে পারতো না। তাই তিনি কয়েকটি ওষুধের সংমিশ্রণে তরল ওষুধ শিশিতে করে রোগীদের দিতেন যাতে তারা সঠিক চিকিৎসা পায়।

মিস আর্ণল্ড নামে তার অমতে একটি ইনসিওরেন্স করা হয়। তিনি ১৯২৮ সালে তার চিঠিতে লিখেছিলেন, "আমি কখনো আমার জীবনের বীমা করিনি এবং কখনো আমার বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয় করিনি, তাই আমার স্বর্গের পিতা ছাড়া আর কোনো কিছু চাওয়ার নাই।" তিনি ইনসিওরেন্স গ্রহণ করেননি। তার চিকিৎসা সেবার কথা শুনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর কৌতূহলী হয়ে আতাইকুলা পরিদর্শনে আসেন। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদক 'কাইজার-ই-হিন্দ' পদকে ভূষিত হন। কিন্তু তিনি নম্রতায় ঐ পদক গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি যীশুখ্রীষ্টের বাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, "আমি সেবা পেতে আসি নাই কিন্তু সেবা দিতে এসেছি।"

 

মৃত্যু

 

১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে শেষবারের মতো মিস আর্নল্ড ছুটি কাটাতে অস্ট্রেলিয়াতে যান। অথচ তার মন পড়ে ছিলো বাংলার হতদরিদ্র মানুষের জন্য, বারবার তাদের ম্লান, ক্ষুধার্ত, অসুস্থ চেহারা মনে পড়ত। তিনি দুঃস্থ মানুষদের কষ্টে ব্যথিত হয়ে আবার ফিরে যেতে চাইলেন আতাইকুলাতে, কিন্তু মিশন বোর্ড তার শারীরিক অবস্থা দেখে কোনোভাবে পাঠাতে রাজি হয়নি। অবশেষে সবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে পাবনার আতাইকুলাতে ফিরে আসেন। বার্ধক্য ও অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। তিনি আতাইকুলাতে আর দালান করেননি, একটি কুঁড়েঘরে থাকতেন। এক মরণ রোগ তাকে পেয়ে বসেছিল। মিশন বোর্ড তার চিকিৎসা ও অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন, "মিশন হাউস যেন আমাকে না নেয়, আমি এই গ্রামেই থাকতে চাই যতদিন না আমার প্রভু আমাকে তাঁর কাছে তুলে নেন।" ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দের ৯ই জুলাই এই মহীয়সী নারী আতাইকুলাতে তাঁর কুঁড়েঘরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইছামতি নদীর তীরে ঢাকা পাবনা হাইওয়ের পাশে তিনি খ্রীষ্টানদের জন্য একটি কবরস্থান তৈরি করেছিলেন। সেখানে তাকে সমাধি দেওয়া হয় যা এখনও তার সাক্ষ্য বহন করে।

এই পরিশ্রমী মহীয়সী নারী সমস্ত সুখ ত্যাগ করে নিজের দেশ ছেড়ে একটি কুটিরে এসে বসবাস করেছেন। নিজের জন্য সমস্ত সম্মান, সুবিধা ও উপহার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঝড়, বৃষ্টি, রোদের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে, গরুর গাড়িতে করে এবং নৌকায় করে চিকিৎসা সেবা দিতেন। অনেকবার তিনি বর্ষাকালে বিলের মধ্যে ঝড়- বৃষ্টিতে পড়েছিলেন। প্রেরিত পৌল যেমন তার সাক্ষ্যে খ্রীষ্টের জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করে নিপীড়ন, ক্ষুধা, দারিদ্র্যে ভুগেছেন, অসুস্থতা, ঝড়, নৌকাডুবিতে পড়েছেন (২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ), মিস আর্নল্ড তেমনি প্রেরিত পৌলের মতো কষ্টের জীবন যাপন করে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: ড. ডেনিশ দিলিপ দত্ত, আশীর্বাদের ঝর্ণাধারায়, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ, ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ৩৯-৪৫, ৪৭

 

 

এসো একক কাজ করি

 

 

 

মানচিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা

 

তোমরা একটা সাদা কাগজে নিচে ছাপানো বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে অঙ্কন করবে। এরপর ঐ মানচিত্রে মিস এলেন আর্নল্ড যে এলাকা (উপজেলা) ও জেলা থেকে তার সেবাকাজ শুরু করেছে, সেই স্থানগুলো সনাক্ত করতে হবে এবং তার মিশনারি যাত্রার রোডম্যাপ অঙ্কন করতে হবে। রোডম্যাপ তৈরি করার পর যে সমস্ত এলাকায় তিনি তার ত্যাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার কাজ করেছেন সেই স্থানসমূহ তীর চিহ্ন দিয়ে সনাক্ত করো এবং কাগজের ডান পাশে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

নিচের মানচিত্রের ছবি দেখে অঙ্কন করো।

 

পরবর্তী সেশনে তোমরা বাইবেল থেকে আরও একটি ত্যাগের মাধ্যমে সেবার ব্যাখ্যা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনী সম্পর্কে জানবে।

শিক্ষক হয়তো শেষে তোমাকে প্রার্থনা করতে বলতে পারেন বা নিজে করবেন। সেশন শেষে শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় জানাও।

Content added || updated By

সমবায় উন্নয়নে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা

উপহার ৪১-৪২

সমবায় উন্নয়নে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা

 

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, বিগত দুটি সেশনে তোমরা পবিত্র বাইবেল থেকে এবং একজন উনিশ শতকের মিশনারির সেবা করার জন্য কষ্টভোগ ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সেবা করার বেশ ভালো ধারণা পেয়েছ। এই দুটি সেশনেও তোমরা বাইবেল ও একজন মিশনারির জীবনী থেকে সমবায় উন্নয়নে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা দান করে সমাজের কল্যাণ কীভাবে সাধন করা যায় তার উজ্জ্বল ধারণা পাবে। শিক্ষক তোমাকে নির্দিষ্ট পাঠ থেকে পবিত্র বাইবেল পড়তে বলবেন। তাই আগে থেকে নিচের দেওয়া বাইবেল পাঠের অংশটুকু পড়ে প্রস্তুত থেকো।

পবিত্র বাইবেল পাঠ

শিক্ষক তোমাদের মধ্যে একজনকে পবিত্র বাইবেল থেকে প্রেরিত/শিষ্যচরিত ৪:৩২-৩৭ পদ এবং মথি ৭:১২ পদ পড়তে বলবেন। প্রস্তুত থেকো বা তুমি বাইবেল পাঠ করতে চাইলে শিক্ষককে অনুরোধ করতে পারো।

 

শিষ্যদের মধ্যে ত্যাগের ও সেবার মনোভাব

প্রেরিত/শিষ্যচরিত ৪:৩২-৩৭ পদ

 

"খ্রীষ্টে বিশ্বাসীরা সবাই মনেপ্রাণে এক ছিল। কোন কিছুই তারা নিজের বলে দাবি করত না বরং সব কিছুই যার যার দরকার মত ব্যবহার করত। প্রেরিতেরা মহাশক্তিতে সাক্ষ্য দিতে থাকলেন যে, প্রভু যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, আর তাদের সকলের উপর ঈশ্বরের অশেষ দয়া ছিল। তাদের মধ্যে কোন অভাবী লোক ছিল না, কারণ যাদের জমি কিম্বা বাড়ী ছিল তারা সেগুলো বিক্রি করে টাকা-পয়সা এনে প্রেরিতদের পায়ের কাছে রাখত। পরে যার যেমন দরকার সেইভাবে তাকে দেওয়া হত। যোষেফ নামে লেবির বংশের একজন লোক ছিলেন। সাইপ্রাস দ্বীপে তাঁর বাড়ী ছিল। তাঁকে প্রেরিতেরা বার্ণবা, অর্থাৎ উৎসাহদাতা বলে ডাকতেন। তাঁর এক খণ্ড জমি ছিল; তিনি সেটা বিক্রি করে টাকা এনে প্রেরিতদের পায়ের কাছে রাখলেন।"

মথি ৭:১২

 

"তোমরা অন্য লোকদের কাছ থেকে যেরকম ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে সেইরকম ব্যবহার কোরো। এটাই হল মোশির আইন-কানুন ও নবীদের শিক্ষার মূল কথা।" 

তোমাকে একটু সহজভাবে বলি

 

যীশুকে যারা বিশ্বাস এবং গ্রহণ করেছিল তারা প্রত্যেকে ধনী বা স্বচ্ছল ছিল না, অনেকেই ছিল দীনহীন। খ্রীষ্টের শিক্ষা এবং যীশুখ্রীষ্টকে অনুসরণ করতে হলে দুনিয়ার ধনসম্পদ ত্যাগ করে অনুসরণ করতে হবে। এই শিক্ষা তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছিল। যারা ধনী ছিল প্রত্যেকে তাদের ধনসম্পদ এনে এক জায়গায় রাখত। দীনহীন বা ধনী সকলে যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সেখান থেকে নিত। এ যেন কিছুটা সমবায় সমিতির মতো, সকলে সমানভাবে জীবন যাপন করত। যীশুখ্রীষ্ট যেভাবে ত্যাগের মহিমায় নিজেকে সমর্পণ করেছেন, তেমনি তাঁর অনুসারীরা তাদের নিজেদের সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করে তাদের খ্রীষ্টিয়ান ভাইবোনদের জন্য দিয়েছিল। এ কারণে প্রত্যেকে তাদের জীবন মান উন্নত করে দারিদ্রদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছিল। আমরাও এভাবে আমাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে যারা অভাবে আছে তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যেমন নিজেদের জন্য অন্যের কাছ থেকে আশা করি ঠিক একই রকমভাবে অন্যরাও আশা করে। অতএব, শুধু নিজের জন্য চিন্তা না করে অন্যের দুঃখ-দুর্দশার দিনে তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। ঈশ্বর আমাদের কাছে থেকে এমন সেবাই আশা করেন।

 

আজ আমরা এমন একজন ব্যক্তির সম্পর্কে জানব যিনি নিজের জন্য চিন্তা না করে অন্যের দুঃখ-দুর্দশার দিনে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং, সিএসসি।

 

 

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

 

ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং, সিএসসি ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা মেরী ও বাবা ডানিয়েল ইয়াং মিলে একটি সুখী পরিবার। পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে চার্লস ছিলেন তৃতীয়। চতুর্থ সন্তান জন্ম দেয়ার সময় চার্লসের মা মারা যান। দানিয়েল ইয়াং সন্তানদের দেখাশোনা ও চাকুরি একসঙ্গে সামলাতে না পেরে চার্লসকে একটি অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেন। সেখান থেকে চার্লস একটি সেমিনারিতে দারোয়ানের চাকরি করা শুরু করেন। প্রাথমিক স্কুল পার হয়ে তিনি নিউইয়কের দ্যা মোস্ট হলি রোজারিও হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেই ঐ ধর্মপল্লীর যাজক পূর্ব বাংলায় বা বর্তমানে বাংলাদেশে মিশনারি হিসেবে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে ১৯ বছর বয়সে চার্লস নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পবিত্র ক্রুশ সেমিনারিতে যোগ দেন। পড়াশোনা শেষ করে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নভিশিয়েটে যোগ দেন।

 

আহ্বান

 

ফাদার চার্লস ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের ২রা জুলাই প্রথম ব্রত গ্রহণ করেন। তিনি চারটি ব্রত গ্রহণ করেছিলেন: দরিদ্রতা, কৌমার্য, বাধ্যতা এবং বিদেশে বাণী প্রচার। তার সব সময় স্বপ্ন ছিল, তিনি একজন বিদেশি মিশনারি হবেন। ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে জুন তিনি যাজক পদ লাভ করেন এবং ঐ বছরের অক্টোবর মাসে ফাদার চার্লস পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) উদ্দেশে রওনা দেন। ২৫শে নভেম্বর ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকায় এসে পৌঁছেন।

 

 

সমবায় ঋণদান সমিতির বিষয়ে প্রাথমিক চিন্তা

 

ফাদার চার্লস, ময়মনসিংহ এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মানুষের প্রচন্ড দারিদ্র্য কাছে থেকে দেখেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন যে অর্থ দান করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা অসম্ভব। তিনি এই দারিদ্রদ্র্য থেকে মুক্ত করার নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করেন। অবশেষে তিনি বুঝতে পারেন যে, সমবায় ঋণদান সমিতি দ্বারাই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। এ বিষয়ে তিনি তখন তৎকালীন আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেনারের সঙ্গে দেখা করেন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের এই ধারণা বুঝিয়ে বলেন। আর্চবিশপ মহোদয় ফাদার চার্লসের মাঝে বিপুল উৎসাহ দেখে কানাডায় অবস্থিত নোভা স্কটিয়ারি অ্যান্টিহোনিশ-এর কোডি ইনস্টিটিউটে সমবায় ঋণদান সমিতির উপর পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ১৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দে পরবর্তী দুই বছর পড়াশোনা করে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন।

 

 

ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্ম

১৯৫৪ সালে ঢাকায় এসে তিনি এক মিশন থেকে অন্য মিশনের যাজকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩রা জুলাই পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার চার্চে প্রথম সমবায় ঋণদান সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই সভা হলো বাংলাদেশের প্রথম সমবায় ঋণদান সমিতির সভা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৩ই মার্চ ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে, ১৯৪০-এর বেঙ্গল সোসাইটি অ্যাক্টের অধীনে 'দি খ্রিষ্টান কো- অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড' নামে নিবন্ধন করা হয়।

 

 

দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদান

 

মানুষের দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন। ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ মরিয়মনগর, বিড়ইডাকুনী, বারমারী, রাণীখং অঞ্চলে তিনি দীর্ঘদিন মানুষকে সমবায় ঋণদান সমিতির বিষয়ে সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন। ঐ সমস্ত অঞ্চলে দরিদ্রদের জন্য "ধান ব্যাংক" পরিচালনা করেছিলেন। ঠিক যেমন যীশুর শিষ্যরা ও বিশ্বাসীরা সমস্ত সম্পত্তি এক জায়গায় জমা করতো এবং যার যতটুকু দরকার হতো ততটুকু নিতো; কেউ দীনহীন ছিলো না (প্রেরিত/শিষ্যচরিত ৪:৩২-৩৭ পদ)।

ফাদার চার্লসও সেইভাবে ধান ব্যাংকের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের অভাব ঘুচাতেন। তিনি ফসলের বীজ, গৃহপালিত পশুপাখি ও অর্থ দিয়ে অভাবী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও বিদেশি সাহায্যের উপর ভরসা না করে, স্থানীয় জনগণকে অর্থ সাহায্য দেওয়ায় অনুপ্রাণিত করতেন। সেই অর্থ দিয়ে দেশের দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ সহায়তা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি অন্যান্য যাজকদের সমন্বয়ে 'কোর' নামক একটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা স্থাপন করেন। ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষের পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এই 'কোর' পরবর্তীকালে 'কারিতাস বাংলাদেশ' নামে প্রতিষ্ঠিত হয়, যে সংস্থা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে।

 

 

মৃত্যু

 

ফাদার চার্লস জে. ইয়াং, সিএসসি, ১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর পরলোকে গমন করেন। বর্তমান খ্রীষ্টান সমাজের উন্নয়নে তাঁর যে অবদান তা কেউ ভুলে যায়নি। কারণ 'দি খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড' এবং 'কারিতাস বাংলাদেশে'র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে তিনি অমর হয়ে আছেন।

তথ্যসূত্র: স্মিতা ইমেন্ডা রোজারিও, ব্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের পথিকৃৎ ফাদার চার্লস জে ইয়ং, সিএসসি (সমবার্তা, প্রকাশনার ৩৬ বছর, বর্ষ: ৩৬ সংখ্যা ২, ২০২২ খ্রীষ্টাব্দ)। ২৬-২৮

 

প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করি

 

তোমার প্রিয় শিক্ষক তোমাদের এখন একটা সাদা কাগজে প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে বলবেন। তোমরা প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়ায় যে সমস্ত বিষয় নিয়ে লিখবে তা হলো:

১. পবিত্র বাইবেলের ব্যাখ্যা থেকে এবং দুইজন মহান ব্যক্তির ত্যাগ ও সেবাদান থেকে কী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ?

 ২. সমাজের কল্যাণে কীভাবে এই ধরনের সেবাকাজ তোমরা করতে পারো? 

লেখা শেষ হয়ে গেলে কাগজগুলো শিক্ষকের নিকট জমা দাও।।

 

 

আগামী সেশনের নির্দেশনা

সমাজে সেবামূলক কাজ করি

 

শিক্ষক তোমাদের শ্রেণিকক্ষে তোমাদের সংখ্যা অনুসারে ২/৩ দলে ভাগ করে দিবেন। এরপর প্রতিটি দল একটি সেবামূলক সংগঠন তৈরি করবে। তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সংগঠনের নাম দিতে পারো (যেমন- সবুজ সেবা সংঘ, আনন্দ মুখ, পাশে থাকি সংঘ, এলাকার নামে সেবা সংঘ ইত্যাদি)। তোমাদেরকে সংগঠিত হয়ে সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে কোনো সেবামূলক কাজ করতে হবে। এর জন্য শিক্ষক তোমাদের এক সপ্তাহ সময় বা আরও বেশি সময় দিতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে তোমরা নিজেদের এলাকায় দলগতভাবে সেবামূলক কাজ করবে এবং এই সেবাকাজ করতে গিয়ে যা তোমাদের ত্যাগ করতে হয়েছে (যেমন- সময়, অর্থ, খাবার, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) সেই সকল বিষয় লিখে রাখবে। সংগঠনের যে কোনো একজন প্রতিদিন জার্নাল/দিনলিপি লিখবে। সেবামূলক কাজগুলোর চিত্র ধারণ করবে। যদি সম্ভব হয় সেবা গ্রহণকারীর মন্তব্য সংগ্রহ করবে। এরপর তোমরা সাংগঠনিকভাবে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে। আগামী সেশনে তোমার সংগঠনের ত্যাগের মাধ্যমে যে সেবামূলক কাজ করেছ তার সবকিছু যুক্ত করে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করে নিয়ে আসবে।

 

পোর্টফোলিও কী?

 

একটি ফাইলের মধ্যে সংগঠনের প্রতিদিনের সেবা কাজের জার্নাল/দিনলিপি, ছবি, সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন ও সেবা গ্রহণকারীর মন্তব্য ইত্যাদি তারিখ অনুসারে সংরক্ষণ করা।

সেশন শেষে তোমার শিক্ষককে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।

Content added || updated By

পোর্টফোলিও উপস্থাপন

উপহার ৪৩

পোর্টফোলিও উপস্থাপন

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষের সহপাঠীদের ও শিক্ষককে শুভেচ্ছা জানাও।

 

বিগত সেশনগুলোতে তোমরা নিজ এলাকার পরিদর্শন করে, বাইবেলের ব্যাখ্যা শোনার মাধ্যমে এবং দুইজন মহান ব্যক্তির জীবনী পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছ। তার উপর ভিত্তি করে আজ সাংগঠনিকভাবে তোমাদের নিজ এলাকায় যে সেবা কাজগুলো করেছ তার পোর্টফোলিও উপস্থাপন করতে যাচ্ছ। প্রতিটি দলকে শিক্ষক ১০ মিনিট করে সময় দেবে যাতে তোমাদের সেবামূলক কাজগুলো ছবিসহ উপস্থাপন করতে পারো। উপস্থাপনের পরে তোমার দলকে অন্য দলের সদস্যরা আরও সহজভাবে বোঝার জন্য প্রশ্ন করতে পারে এবং তুমিও অন্য দলকে প্রশ্ন করতে পারবে। তোমরা নিজেদের পোর্টফোলিওতে যে ছবি প্রিন্ট করে এনেছ, উপস্থাপনের সময় ছবি প্রদর্শনের জন্য বোর্ডে লাগিয়ে নাও যাতে তুমি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারো।

 

 

পোর্টফোলিও উপস্থাপন করি

 

পোর্টফোলিও উপস্থাপনের আগে তোমাদের সেবা কাজের ছবিগুলো এক এক করে বোর্ডে টানাবে যাতে পরিষ্কারভাবে সবাই দেখতে পারে। এরপর তোমাদের সংগঠনের সেবাকাজের ছবি দেখিয়ে ব্যাখ্যা করো এবং সংক্ষিপ্তভাবে প্রতিবেদন পাঠ করো। তোমাদের উপস্থাপনের জন্য শিক্ষক তোমাদের নির্দিষ্ট সময় দিবেন। সেই সময়ের মধ্যে তোমাদের উপস্থাপনা শেষ করবে।

 

উপস্থাপনার পরে তোমাদের দলের সব কাগজ গুছিয়ে পোর্টফোলিও শিক্ষকের কাছে জমা দাও।

অন্য দল/সংগঠনের সুন্দর সেবামূলক কাজের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দাও। এরপর শিক্ষককে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।

Content added || updated By

ছবি দেখে ধারণা পাই

অভিজ্ঞতা ২

উপহার ৪৪

ছবি দেখে ধারণা পাই

 

এই সেশনের শুরুতে শিক্ষক তোমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কয়েকটি স্থিরচিত্র প্রদর্শন করবেন। তারপর তিনি তোমাদের একটি ভিডিও প্রদর্শন করবেন।

 

সম্ভাব্য ভিডিওর লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো।

https://youtu.be/ay416AyoqRU?t=218 অথবা

https://youtu.be/OFZXxb3FNkw?t=512

ভিডিও দেখানোর জন্য শিক্ষক মাল্টিমিডিয়া ও স্ক্রিন ব্যবহার করবেন। শিক্ষক স্থিরচিত্রগুলো একটি রশি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। তুমি এমনভাবে আসন গ্রহণ করো যেন ছবি ও ভিডিও সুন্দরভাবে দেখতে পারো।

 

 

ভিডিও প্রদর্শন করার সময় তুমি অন্যদের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করো। তুমি মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করো কি না শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন। রশির সঙ্গে যুক্ত থাকা স্থিরচিত্রগুলো তুমি ভালো করে দেখো। ভিডিও এবং স্থিরচিত্রগুলো দেখা শেষ হলে কিছুটা সময় ছবি ও ভিডিও নিয়ে একটু চিন্তা করো। তুমি কী দেখতে পেলে তা অনুধাবন করো। তুমি যা চিন্তা করেছ তার একটি একক কাজ করতে হবে। শিক্ষক এই কাজের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিবেন। তোমাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে।

ছবি ও ভিডিও দেখে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধরন ও কারণগুলো সম্পর্কে তুমি কি কোনো ধারণা পেলে? ধারণাগুলো নিচে নমুনা ছক আকারে তোমাকে লিখতে হবে।

 

১। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধরনগুলো কী কী?

যেমন 

১। বন্যা 

২। 

৩।

২। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণগুলো কী কী?

যেমন 

১। অপরিকল্পিত রাস্তা তৈরি

২। 

৩।

৩। ছবি ও ভিডিওতে মানুষ কীভাবে বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করছে?

যেমন 

১। মানুষ একে অপরকে সাহায্য করছে

২। 

৩।

লেখা শেষ হলে শিক্ষকের কাছে তোমার কাজটি জমা দিবে। শিক্ষক এ কাজের জন্য তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তার জন্য তুমি প্রস্তুত থেকো।

 

পরবর্তী ক্লাসের প্রস্তুতি হিসেবে ফ্লিপ চার্ট তৈরির জন্য পুরাতন ক্যালেন্ডার ও ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে এসো।

শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ

 

তুমি তোমার লেখায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের করণীয় কতটুকু প্রকাশ করতে পেরেছ শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

Content added || updated By

ফ্লিপ চার্ট তৈরি করি

উপহার ৪৫

ফ্লিপ চার্ট তৈরি করি

 

এই সেশনে তোমাদের দলগত কাজ করতে হবে। দলগত কাজ করার জন্য শিক্ষক তোমাদের দুটি বা তিনটি দলে ভাগ করবেন। তোমাদের সংখ্যা অনুসারে দল বিভাগ করা হবে। শিক্ষক প্রত্যেক দল থেকে একজন করে দলনেতা মনোনীত করবেন। তুমিও দলনেতা হতে পারো। শিক্ষক যদি তোমাকে দলনেতা না করেন তাতে সমস্যা নেই। তুমি দলে অংশগ্রহণ করবে, অংশগ্রহণ করা খুবই আনন্দের।

 

দলগত আলোচনা ও ফ্লিপ চার্ট তৈরি

 

শিক্ষক তোমাদের যে ছবি ও ভিডিও দেখিয়েছেন তা তুমি মনোযোগ দিয়ে দেখেছ। তুমি তা পর্যবেক্ষণ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধরন, কারণ ও প্রতিকারগুলো এককভাবে কাগজে লিপিবদ্ধ করে শিক্ষকের কাছে জমাও দিয়েছ।

আজকে তোমাকে দলগত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে একটি ফ্লিপ চার্ট তৈরি করতে হবে। পূর্বে পর্যবেক্ষণকৃত ধারণার মধ্য দিয়ে মানুষ ও প্রকৃতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তোমরা অনুধাবন করতে পারবে। এক্ষেত্রে তোমার করণীয় কী তাও বুঝতে পারবে। আলোচনার সময় তুমি ভালো করে খেয়াল করো যে তোমার চারপাশে কোন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আছে, তার কারণ ও প্রতিকারের উপায়গুলো কী কী? সে সমস্ত বিষয় তুমি দলে আলোচনা করে লিপিবদ্ধ করো।

আলোচনায় পাওয়া তথ্য দিয়ে এবার ফ্লিপ চার্ট তৈরি করো। এই কাজটির জন্য বাড়ি থেকে আনা পুরোনো ক্যালেন্ডার ব্যবহার করো। ফ্লিপ চার্টে তথ্যের পাশাপাশি ছবি ও রঙের ব্যবহারও করতে পারো।

নিচের দেয়া তথ্যগুলো দলগত আলোচনায় তোমাকে সহায়তা করবে।

 

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধরনগুলো হতে পারে-

 

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, পাহাড় ধ্বস, খড়া, দাবানল, অগ্নিকাণ্ড, নদী ভাঙন ইত্যাদি। তোমার চিন্তা অনুযায়ী আরও কিছু বিষয় থাকতে পারে তুমি তা আলোচনায় উল্লেখ করো। তারপর দলগতভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণগুলো বের করতে হবে।

 

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণগুলো হতে পারে-

 

বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিত রাস্তা, বাঁধ ও কালভার্ট নির্মাণ, যত্রতত্র বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত ইটভাটা নির্মাণ, কলকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপব্যহার ইত্যাদি। তুমি ভালো করে চিন্তা করো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আর কী কী কারণ থাকতে পারে। তুমি যদি আরও কারণ খুঁজে পাও তাহলে তুমি তা আলোচনায় বলো।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতিকারগুলো হতে পারে-

 

পরিকল্পিত রাস্তাঘাট, বাঁধ ও কালভার্ট নির্মাণ, নগরায়ণ, ইটভাটা নির্মাণ, বর্জ্য নিষ্কাশন, বৃক্ষ নিধন না করা, যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপব্যহার রোধ করা ইত্যাদি। তুমি যদি প্রতিকারের আরও কোনো কারণ খুঁজে পাও তাহলে তুমি তা আলোচনায় বলো।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধরন

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ

প্রতিকারের উপায়

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উপস্থাপন

 

তোমাদের দলগত আলোচনা থেকে প্রাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে তৈরি ফ্লিপ চার্ট পর্যায়ক্রমে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো। উপস্থাপনকালে অন্য দলের কাছ থেকে যদি ভালো ও নতুন কোনো তথ্য খুঁজে পাও তা তোমার নোট বইয়ে লিখে রাখো।

 

শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ

প্রাকৃতির বিপর্যয়ের ধরন, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে তুমি কী ধারণা লাভ করেছ শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

 

Content added || updated By

প্রকৃতির সুরক্ষায় বাইবেল থেকে শিক্ষা

উপহার ৪৬

প্রকৃতির সুরক্ষায় বাইবেল থেকে শিক্ষা

তুমি একটু ভেবে দেখো তো পবিত্র বাইবেল হাজার হাজার বছর আগে লেখা হয়েছে কিন্তু সেখানেও মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষা বিষয়ে লেখা আছে। বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক তোমাদের পবিত্র বাইবেলের আলোকে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। তাহলে এসো, প্রথমে পবিত্র বাইবেলে মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষা বিষয়ে কী লেখা আছে তা একটু জেনে নেই। নিচে তোমার জন্য পবিত্র বাইবেল থেকে কয়েকটি পদ উল্লেখ করা হলো-

আদিপুস্তক ২:১৫, যাত্রাপুস্তক ২৩:১০-১১, দ্বিতীয় বিবরণ ২০:১৯, দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৬-৭, যিশাইয় ৩২:২০, হিতোপদেশ ১২:১০।

প্রকৃতির তত্ত্বাবধান করা

"সদাপ্রভু ঈশ্বর সেই মানুষটিকে নিয়ে এদন বাগানে রাখলেন যাতে তিনি তাতে চাষ করতে পারেন ও তার দেখাশোনা করতে পারেন।" (আদিপুস্তক ২:১৫)

ভূমির প্রতি যত্ন

"পর পর ছয় বছর তোমরা ক্ষেতে চাষ করবে এবং ফসল কাটবে, কিন্তু সপ্তম বছরে জমি চাষও করবে না এবং কোন কিছু বুনবেও না। তাতে এমনি যা জন্মাবে তোমাদের মধ্যেকার গরীব লোকেরা তা থেকে খাবার পাবে আর যা পড়ে থাকবে তা বুনো পশুরা খেতে পারবে। তোমাদের আংগুর ও জলপাই বাগানের ব্যাপারেও ঐ একই নিয়ম পালন করবে।" - (যাত্রাপুস্তক ২৩:১০-১১)

গাছপালার প্রতি যত্ন

"তোমরা অনেক দিন ধরে যখন কোন গ্রাম বা শহর ঘেরাও করে রেখে তা দখল করবার জন্য যুদ্ধ করতে থাকবে তখন কুড়াল দিয়ে সেখানকার কোন গাছ নষ্ট করবে না, কারণ সেগুলোর ফল তোমরা খেতে পারবে। সেগুলো তোমরা কেটে ফেলবে না।" (দ্বিতীয় বিবরণ ২০:১৯)

পাখির প্রতি যত্ন

"তোমরা চলতে চলতে পথের পাশে কোন গাছে কিম্বা মাটির উপরে যদি এমন কোন পাখীর বাসা দেখতে পাও যেখানে পাখীর মা বাচ্চাদের উপর বসে আছে কিম্বা ডিমের উপর তা দিচ্ছে, তবে বাচ্চা সুদ্ধ মাকে তোমরা ধরে নিয়ে যাবে না। তোমরা বাচ্চাগুলো নিতে পার কিন্তু মাকে অবশ্যই তোমাদের ছেড়ে দিতে হবে। এতে তোমাদের মংগল হবে আর তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে।" (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৬-৭)

পশুর প্রতি যত্ন

যিশাইয় ৩২:২০ পদে লেখা আছে, "কিন্তু প্রত্যেকটা স্রোতের ধারে বীজ লাগিয়ে আর তোমাদের গরু ও গাধাগুলো নিরাপদে চরতে দিয়ে তোমরা সুখী হবে।" হিতোপদেশ ১২:১০ পদে লেখা আছে, "ঈশ্বরভক্ত লোক তার পশুদের যত্ন করে, কিন্তু দুষ্টদের মমতাও নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ।"

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর আদম-হবাকে প্রকৃতির সুরক্ষার দায়িত্ব দিলেন। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট গাছপালা, পশুপাখি, জমি-ভূমি, নদ-নদী, বন, পাহাড়-পর্বত এবং সকল মানুষের যত্ন নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। ঈশ্বর আদম-হবাকে আশীর্বাদ করলেন। আদম-হবাকে বংশবৃদ্ধি করতে ও পৃথিবীকে ভরে তুলতে বললেন। ঈশ্বর সমস্ত কিছু উত্তম করে সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের দায়িত্ব হলো ঈশ্বরের উত্তম সৃষ্টির প্রতি যত্ন নেয়া ও সুরক্ষা করা। সৃষ্টির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা আমাদের প্রত্যেকেরই নৈতিক দায়িত্ব। আমরা প্রকৃতির সুরক্ষার এ মহান দায়িত্ব অবহেলা করব না। মানুষ মানুষের প্রতি এবং সৃষ্টির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করবো, এটি ঈশ্বরের প্রত্যাশা। আমরা অবশ্যই ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালোবাসব ও যত্ন করব।

পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষা বিষয়ে পবিত্র বাইবেলের পদগুলো শিক্ষক নিজে পড়তে পারেন। তিনি তোমাদের দিয়েও পদগুলো পড়াতে পারেন। পদগুলো তুমি আগে পড়ে নাও যাতে সুন্দর করে উচ্চারণ করতে পারো। এই পদগুলো নিয়ে শিক্ষক তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বাইবেলের এই পদগুলো তোমার বুঝতে কঠিন হলে আলোচনার সময়ে শিক্ষককে বলো। শিক্ষক তোমাকে সহজ করে বুঝিয়ে বলবেন। আলোচনা শেষে শিক্ষক তোমাদের নিচের প্রশ্নগুলো করবেন। তোমাদের উত্তর দিতে হবে। তুমি প্রস্তুত থেকো এবং প্রশ্নোত্তরে অংশগ্রহণ করো।

 

এসো প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানি

১. পবিত্র বাইবেলে জলাশয়, নদী, পাহাড়, ভূমি ও গাছপালা সুরক্ষা বিষয়ে কী লেখা আছে? 

২. পবিত্র বাইবেলে পশু, পাখি, মাছ ও বীজের সুরক্ষা বিষয়ে কী লেখা আছে? 

৩. বাইবেলে গ্রাম, শহর, ফসল ও ফলের গাছের যত্ন সম্পর্কে কী লেখা আছে? 

৪. বাইবেলে গরিব, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের যত্ন সম্পর্কে কী লেখা আছে?

Content added || updated By

প্রকৃতির সুরক্ষায় গ্রেটা থুনবার্গ

উপহার ৪৭-৪৮

প্রকৃতির সুরক্ষায় গ্রেটা থুনবার্গ

শিক্ষক তোমাদের গ্রেটা খুনবার্গ (Greta Thunberg)-এর ছবি দেখাবেন। গ্রেটা খুনবার্গ প্রকৃতির সুরক্ষা বিষয়ে যা বলেছেন তা আলোচনা করবেন। মজার বিষয় হলো কী জানো, গ্রেটা খুনবার্গ তোমাদের চেয়ে বয়সে খুব বেশি বড়ো নয়, কিন্তু তিনি প্রকৃতির সুরক্ষায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাহলে এসো, গ্রেটা খুনবার্গ সম্পর্কে জেনে নেই।

 

গ্রেটা থুনবার্গের পরিচয়

গ্রেটা খুনবার্গ (Greta Thunberg) একজন সুইডিশ কিশোরী। পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত মুখ। স্কুল পালিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রুখতে আন্তর্জাতিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী তার পরিচয় আছে। গ্রেটার বাবার কাছ থেকে জানা গেছে যে, গ্রেটা আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জানতে পারে।

 

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গ্রেটার ক্যাম্পেইনিং

২০১৮ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে ১৫ বছর বয়সে গ্রেটা স্থানীয় এক পত্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তিন মাস পর আগস্টে সুইডেনের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিক্ষোভ করা শুরু করেন। ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দে প্যারিস সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সুইডেন সরকার যেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ২০১৮ খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী গ্রেটার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজ নিজ দেশে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

 

গ্রেটার অর্জন

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য দিতে তিনি নিউ ইয়র্কে যান। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য তিনি বিমানে উঠতে অস্বীকৃতি জানান, কারণ বিমানের জ্বালানি পোড়ালে পরিবেশের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। গ্রেটা নিউ ইয়র্কে একটি রেসিং ইয়টে করে যান, সেই যাত্রায় তার সময় লাগে দুই সপ্তাহ। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে গ্রেটা রাজনীতিবিদদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রশ্নের উত্তরের জন্য তরুণদের ওপর নির্ভর করছেন। গ্রেটা বলেন, 'আপনাদের কত দুঃসাহস! আমার এখানে থাকা উচিত না, আমার স্কুলে থাকার কথা। তবুও আপনারা আমাদের মতো তরুণদের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন কীভাবে!' তাকে ঐ বছর টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলন ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি।

 

গ্রেটার চাওয়া

 

১. বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর সরকার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্বন নিঃসরণ সীমিত রাখার জন্য দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। 

২. তরুণদের পরিবেশগত ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে না ফেলার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। 

৩. বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা নিজ নিজ দেশে একই ধরনের দাবি তুলে প্রতিবাদ শুরু করে। 

৪. পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশ্বের নানা দেশের সরকারের কাছে বিভিন্ন ধরনের দাবি তুলে ধরেন।

প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তোমাদের বাড়ির চারপাশে, বিদ্যালয়ে, পাড়া ও মহল্লায় সকল ক্ষেত্রে তোমাদের প্রকৃতির যত্ন নিতে হবে যেন সকলে মিলে সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারো। প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা শুধু কোনো একশ্রেণির লোকের দায়িত্ব নয়, এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের।

গ্রেটা থুনবার্গ কর্তৃক পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষার ঘটনা বিবরণী শিক্ষক তোমাদের পড়ে শোনাবেন। তিনি তোমাদের দিয়েও পড়াতে পারেন। শিক্ষক খুব সহজ করে উপরের বিষয়টি আলোচনা করবেন। আলোচনার সময় তোমাকে মনোযোগী হতে হবে। তোমার যদি কোনো অস্পষ্টতা থাকে তাহলে আলোচনার সময় শিক্ষককে প্রশ্ন করে জেনে নিও। আশা করি আলোচনার মধ্য দিয়ে জানতে তোমার খুব মজা লাগবে। শিক্ষক তোমাদের নিচের প্রশ্নগুলো করবেন। তার নির্দেশনায় উত্তরগুলো নিচে লিখতে চেষ্টা করো।

 

গ্রেটা থুনবার্গের পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষা বিষয়ে তথ্যাবলি

 

গ্রেটা খুনবার্গ ও পরিবেশ সুরক্ষার তথ্যাবলি

উত্তরমালা

গ্রেটা খুনবার্গ কে?

 

গ্রেটা থুনবার্গ কত বছর বয়সে পরিবেশ নিয়ে কাজ শুরু করেন?

 

গ্রেটা খুনবার্গ কী কী বিষয় নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছিলেন?

 

গ্রেটা খুনবার্গ কী কী অর্জন করেছিলেন?

 

গ্রেটা পুনবার্গ বিভিন্ন দেশ ও নেতাদের কাছে কী কী দাবি করেন?

 

প্রকৃতির সুরক্ষায় তুমি কী করতে পারো?

 

 

গ্রেটা খুনবার্গ পরিবেশ সুরক্ষায় যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ সেভাবে পরিবেশের যত্ন রেখেছেন। তার মধ্যে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস "লাউদাত্তো সি” (প্রভুর প্রশংসা) নামক বইয়ে প্রকৃতি পরিবেশের সাথে মানবকুলের সুসম্পর্ক স্থাপন ও প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষায় মানুষের অংশগ্রহণমূলক দায়িত্ব সম্পর্কে চেতনা প্রদান করেন।

 

চলো গাছ লাগাই

 

তোমাকে একটি মজার কাজ করতে হবে। তুমি প্রকৃতির সুরক্ষায় তোমার নিজ বাড়ি, পাড়া, মহল্লা ও বিদ্যালয়ে ছোটো ছোটো অনেক কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারো। তার মধ্যে বৃক্ষরোপণ করাও একটি ভালো কাজ হতে পারে। বৃক্ষরোপণ করা একটি সহজ কাজ কিন্তু প্রকৃতির সুরক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমাকে এই সেশনে ২টি কাজ করতে হবে। প্রথমত: তোমার নিজ বাড়ি, পাড়া, মহল্লা বা বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ করে তার একটি ভিডিও চিত্র শিক্ষককে প্রদান করতে হবে। দ্বিতীয়ত: তুমি যে বৃক্ষরোপণ করবে তার একটি তথ্য সিট তৈরি করে শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে।

নিচে তোমার জন্য বৃক্ষরোপণের একটি তথ্য সিটের নমুনা দেয়া হলো-

বৃক্ষরোপণের তথ্য সিট

 

শিরোনাম 

তুমি যে কাজটি করেছ সেই কাজের শিরোনাম লেখো যেমন 'বৃক্ষরোপণ'।

 

বৃক্ষের নাম 

তুমি যে বৃক্ষ রোপণ করেছ সেই বৃক্ষের নামগুলো লেখো যেমন 'আম, জাম, পেয়ারা'।

 

বৃক্ষরোপণের স্থান 

তুমি কোথায় বৃক্ষ রোপণ করেছ সেই স্থানের নাম লেখো যেমন 'বাড়ির আঙ্গিনায়'।

 

বৃক্ষরোপণের বর্ণনা 

তোমাকে কয়েকটি লাইনে বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে লিখতে হবে, যেমন- কাজটি কত তারিখ করেছ, কখন কাজটি করেছ, কাজটি করতে তোমাকে কে কে সাহায্য করেছে ইত্যাদি।

 

তোমার অনুভূতি

বৃক্ষরোপণ কাজটি করতে তোমার কেমন লেগেছে তা একটি অনুচ্ছেদে লেখো।

 

শিক্ষার প্রতিফলন 

বৃক্ষরোপণ করার মাধ্যমে যীশুর শিক্ষার প্রতিফলন কীভাবে ঘটেছে তা একটি অনুচ্ছেদে লেখো।

Content added || updated By

প্রকৃতির সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি- সেমিনার

উপহার ৪৯-৫০

প্রকৃতির সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি- সেমিনার

এই দুটি সেশনে তোমাকে মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। তোমরা ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ও প্রচারণামূলক কাজে অংশগ্রহণ করবে।

 

 

সেমিনার আয়োজন

সেশন দুটিতে তোমাদের একটি সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। তুমি তোমার বাড়ি, পাড়া, মহল্লায় বা বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পন্ন করে যে ছবি/ভিডিও ধারণ করেছ তা সেমিনারে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সেমিনারের মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণে তুমি কীভাবে ভূমিকা রেখেছ তা অন্যকে দেখাতে পারবে। এটি প্রচারণামূলক কাজের একটি অংশ তা যেন আগত অতিথিরা বুঝতে পারে। ভিডিও চিত্র দেখতে দেখতে তুমি কীভাবে আরও বেশি প্রকৃতির কল্যাণে অংশগ্রহণ করতে পারো সে বিষয়ে চিন্তা করো। সেমিনারের শিরোনাম হতে পারে "প্রকৃতির সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি"। সেমিনারটি আয়োজন করতে শিক্ষক তোমাদের সাহায্য করবেন এবং কক্ষ ব্যবস্থাপনায় তুমি শিক্ষককে সহায়তা করবে। সেমিনার আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পূর্ব থেকে প্রস্তুত রাখো।

 

সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য তুমি অন্য শ্রেণির শিক্ষকদের আমন্ত্রণ করতে পারো। পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন একজন ব্যক্তিকেও শিক্ষকের সহায়তায় আমন্ত্রণ করতে পারো। যিনি সেমিনারের বক্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেমিনারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তার সঙ্গে আগেই আলোচনা করো। তিনি যেন তোমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী বক্তব্য রাখতে পারেন। সেমিনারের আগের দিন বক্তাকে মনে করিয়ে দিও যেন তিনি সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে উপস্থিত হতে পারেন।

যেখানে সেমিনার আয়োজন করা হবে তার পেছনে "প্রকৃতির সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি সেমিনার" শিরোনামে লেখা ব্যানারটি টানিয়ে দাও। তারপর শিক্ষকের সহযোগিতায় সেমিনারটি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করো। সেমিনার বাস্তবায়নের জন্য নিচের ছক অনুসরণ করতে পারো। 

১. অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। 

২. সেমিনারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা। 

৩. বারবার স্লোগান দেয়া- "আমি পরিবেশের যত্ন নিব, অন্যকেও যত্ন নিতে বলব।" 

৪. অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। সেমিনার শেষে শিক্ষক তোমাদের ফিডব্যাক দিবেন। শিক্ষকের দেয়া মন্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনো। 

 

শিক্ষক তোমাকে সেমিনারের সবল দিকগুলো সম্পর্কে বলবেন। কোন দিকগুলো আরও উন্নয়ন করা প্রয়োজন

তাও বলবেন। মানুষ সেমিনারের মূল বার্তা কতটুকু বুঝতে পেরেছে এবং সেমিনারের মধ্য দিয়ে কতটুকু সচেতন হতে পেরেছে, শিক্ষক তাও তোমাদের জানাবেন। সকলের সহযোগিতায় সেমিনারটি সুন্দরভাবে আয়োজন করার জন্য শিক্ষক তোমাদের ধন্যবাদ জানাবেন। শিক্ষকের সহযোগিতার জন্য তুমিও শিক্ষককে ধন্যবাদ জানাও।

 

 

আলোচনা

সেমিনার আয়োজন করতে তোমাদের কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা পেয়েছ এবং কোন কোন বিষয় ভালো লেগেছে? কী কী অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা কতটুকু উৎসাহ লাভ করেছে এবং প্রচারণায় কতটুকু সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা সকলে মিলে আলোচনা করো।

Content added || updated By

সকলের প্রতি সহমর্মী হই

অভিজ্ঞতা ৩

উপহার ৫১

সকলের প্রতি সহমর্মী হই

 

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, সেশনের শুরুতে তোমার শিক্ষক ও সহপাঠীকে শুভেচ্ছা জানাও। একটি প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সকলের সুস্থতা কামনা করো। প্রার্থনা পরিচালনায় শিক্ষক তোমাদের সহযোগিতা করবেন।

 

বিগত কয়েকটি সেশনে তুমি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কিছু ধরন, তার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে কাজ করেছ। পরবর্তী সেশনগুলোয় তুমি অনেক অজানা ও মজার বিষয় জানতে পারবে। আমরা আমাদের চারপাশে নানা ধরনের সমস্যা দেখতে পাই। এই সমস্যাগুলো হতে পারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অথবা আন্তর্জাতিক। যা আমাদের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।

 

একক কাজ

 

এই পর্যায়ে শিক্ষক তোমাকে একটি একক কাজ দিবেন। তোমার চারপাশে বিদ্যমান এমন কিছু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ খুঁজে বের করে তার একটি তালিকা তৈরি করো। নিচের ছকে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জগুলো লিখে রাখো। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে এমন সমস্যা চিহ্নিত করবে যার সমাধানে তুমি নিজেও ভূমিকা রাখতে পারো।


চারপাশে বিদ্যমান কিছু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ

 

১।

 

২।

 

৩।

 

8।

 

 

শিক্ষককে ধন্যবাদ দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করো।

Content added || updated By

সমস্যার সমাধান খুঁজি

উপহার ৫২

সমস্যার সমাধান খুঁজি

 

শুভেচ্ছা বিনিময় করো এবং সমবেত প্রার্থনা করে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নাও।

 

দলগত আলোচনা

পূর্ববর্তী শ্রেণি কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী কাজের জন্য শিক্ষক তোমাদের কয়েকটি দলে ভাগ করে দিবেন। প্রতিটি দলের একজন দলনেতা থাকবে। তুমিও দলনেতা হতে পারো, তাই নিজেকে প্রস্তুত রেখো।

এবার দলের সকল সদস্যদের সঙ্গে পূর্ববর্তী সেশনে আমাদের চারপাশের যে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জগুলোর তালিকা তৈরি করেছিলে তা আলোচনা করো। প্রথমে সকলের তালিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সমস্যা বাছাই করে তার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করো। সমাধান খুঁজে বের করতে তোমার দলের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রাখবে।

 

পোস্টার তৈরি

দলগত আলোচনায় যে সমস্যা ও তার সমাধান খুঁজে পেয়েছ তা একটি পোস্টার পেপারে ছক আকারে উল্লেখ করো। পোস্টার তৈরির প্রয়োজনীয় সামগ্রী শিক্ষক তোমাদের সরবরাহ করবেন। একটি নমুনা ছক দেওয়া হলো:

সমস্যা

সমস্যা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শিক্ষকের দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পোস্টার তৈরির কাজ শেষ করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। অন্য দলগুলোর উপস্থাপনা মনোযোগ দিয়ে শুনবে।

 

শিক্ষককে ধন্যবাদের সঙ্গে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।

Content added || updated By

বাইবেলের ব্যাখ্যায় সহমর্মিতা

উপহার ৫৩-৫৪

বাইবেলের ব্যাখ্যায় সহমর্মিতা

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, বিগত দুটি সেশনে আমরা আমাদের চারপাশের বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত করেছি। মানুষ ও প্রকৃতির এই সমস্যাগুলোর উৎস অনুধাবন করলাম এবং কীভাবে তার সমাধান করা যায় তাও খুঁজে দেখলাম-এই কাজগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা অন্যের প্রতি কীভাবে আমাদের সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারি তা জেনেছি। আমাদের অন্তরের এই সহমর্মিতাবোধ কোনো নির্দিষ্ট প্রাণী, ব্যক্তি, লিঙ্গ, শ্রেণি, সম্প্রদায়, অঞ্চল ইত্যাদির বিবেচনা করে আসে না। প্রকৃত সহমর্মী মানুষ স্থান-কাল-পাত্র ভেদ না করে, সকলের জন্যই সহমর্মিতা অনুভব করেন। অন্যের সুবিধা-অসুবিধাকে নিজের সুবিধা-অসুবিধার চেয়ে বড়ো করে দেখেন।

এই সেশন দুটিতে পবিত্র বাইবেল থেকে সহমর্মী হওয়া বিষয়ে শিক্ষক তোমাকে জানাবেন। শিক্ষক তোমাকে কিছু ছবি ও ভিডিও দেখাতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি সহমর্মী হওয়া বিষয়ে তোমার ধারণা আরও সুস্পষ্ট হবে। মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি সহমর্মি হওয়া বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে চমৎকার কিছু বিষয় লেখা আছে তা তুমি হয়তো কখনও শোননি। তুমি তোমার শ্রেণিতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সহপাঠীদের সঙ্গে সহমর্মিতা বিষয়ে আলোচনাও করতে পারো। একটু ভেবে দেখো তো এটা কত মজার হবে যে তুমি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে সহমর্মী হওয়া বিষয়ে জানতে পারবে। এগুলো জানা তোমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক যখন আলোচনা করবেন তখন খুব মনোযোগ দিয়ে বিষয়গুলো শুনবে কারণ কোনো কোনো বিষয় তোমার কাছে অজানা বা নতুন মনে হতে পারে।

 

পবিত্র বাইবেল থেকে সহমর্মিতা বিষয়ে কয়েকটি পদ তোমার জন্য উল্লেখ করা হলো-

লেবীয় ২৫:৩৫, ১ পিতর ৩:৮ ও মথি ২৫:৩৫-৪০।

অসহায়, অভাবী, গরিব দুঃখীদের প্রতি সহমর্মিতা: "যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দিয়েছিলে; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দিয়েছিলে; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন কাপড় পরিয়েছিলে; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আমার দেখাশোনা করেছিলে; আর যখন আমি জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে গিয়েছিলে"। "আমার এই ভাইদের মধ্যে সামান্য কোন একজনের জন্য যখন তা করেছিলে তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।" - (মথি ২৫:৩৫-৩৬,৪০)।

একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা "সবশেষে বলি, তোমরা সবাই পরস্পরের সঙ্গে মিল রেখে বসবাস করো; তোমরা সহানুভূতিশীল, একে অপরকে ভালোবাসো, দরদি ও নতনম্ন হও।" - ১ পিতর ৩:৮।

অসহায়, অভাবীদের ও অসমর্থদের প্রতি সহমর্মিতা: "যদি তোমাদের দেশবাসীর মধ্যে কেউ দরিদ্র ও তোমাদের মাঝে নিজের ভরণ-পোষণ চালাতে অসমর্থ হয়, তাহলে তাকে সাহায্য করো, যেমন তোমরা বিদেশী এবং অপরিচিতদের প্রতি করে থাকো; যেন তোমাদের মাঝে সে বসবাস করতে পারে।" লেবীয় ২৫:৩৫ পদ।

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

 

সহমর্মিতা হলো অন্যের দুঃখকষ্টে সমব্যথী হওয়া। পবিত্র বাইবেলে অসহায়, অসমর্থ, গরিব, দুঃখী, পিছিয়ে পড়াসহ সকল মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি সহমর্মী হতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি সহমর্মী হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা স্রষ্টার সেবা করতে পারি। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি সহমর্মী হওয়া। আমরা মানুষসহ সকল সৃষ্টির প্রতি সহমর্মী হবো।

সকল ধর্মে সহমর্মিতা

পবিত্র বাইবেল ও বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে সহমর্মী হওয়া বিষয়ে কী লেখা আছে তা দলগতভাবে আলোচনা করে তোমাদের লিখতে হবে। শিক্ষক তোমাদের সংখ্যা অনুসারে ২টি বা ৩টি দলে ভাগ করবেন। শিক্ষক তোমাদের যে কাজ করতে বলবেন তা নিচের বক্সে দলনেতাকে লিখতে হবে। শিক্ষক তোমাদের আলোচনার জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তোমাকে শেষ করতে হবে। সবাই গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করো কি না শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন। এই কাজটি করার সময় তুমি তোমার শ্রেণিতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সহপাঠীদের কাছথেকে সহমর্মিতা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও আলোচনা করতে পারো।

 

আলোচনা শেষে প্রত্যেক ধর্মীয় গ্রন্থাবলি উল্লেখ করে সহমর্মিতা বিষয়ে একটি করে অনুচ্ছেদ লিখো।

 

প্রত্যেক ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে সহমর্মিতা বিষয়ে এখানে একটি করে অনুচ্ছেদ লেখো।

পবিত্র কুরআন-

 

 

 

 

 

 

 

পবিত্র ভগবদ্গীতা-

 

 

 

 

 

 

 

 

পবিত্র ত্রিপিটক-

 

 

 

 

 

 

পবিত্র বাইবেল-

 

 

 

 

 

 

 

Content added || updated By

একাত্মতা কর্মীর

উপহার ৫৫-৫৬

একাত্মতা কর্নার

 

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক তোমাদের বসে চোখ বন্ধ করে এক মিনিট নীরব থেকে ধ্যানের মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি সহমর্মী হওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করতে বলবেন। তোমরা শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করো কিন্তু।

অন্যের বিপদে সহমর্মী হয়ে তাদের পাশে থাকার জন্য শিক্ষক তোমাদের একটি 'একাত্মতা কর্নার' তৈরি করতে বলবেন। 'একাত্মতা কর্নার' তৈরির পরিকল্পনা শিক্ষকের কাছ থেকে ভালোভাবে জেনে নাও।

 

প্রস্তুতি

 

প্রথমেই সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে আলাপ করে একাত্মতা কর্নারে কী কী জিনিস রাখতে পারো তার একটা তালিকা তৈরি করো। তালিকাটি নিম্নরূপ হতে পারে:

শুকনো খাবার

পোশাক

বই...

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তালিকা তৈরি হয়ে গেলে একাত্মতা কর্নারের জন্য কাগজ (কার্টুন) বা অন্য কোনো সহজলভ্য বস্তু দিয়ে একটি বাক্স তৈরি করবে। তৈরিকৃত বাক্সে সুস্পষ্টভাবে 'একাত্মতা কর্নার' লিখবে। বাক্সটি প্রধান শিক্ষক বা বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে রাখতে পারো যেন নিরাপদে থাকে। এরপর সকলে তাদের সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী তালিকার জিনিসগুলো সংগ্রহ করতে শুরু করো। এটি বাধ্যতামূলক নয়, স্বপ্রণোদিত হয়ে সকলে কাজ করবে। নিজ শ্রেণির পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকেও 'একাত্মতা কর্নার' সম্পর্কে জানাতে পারো। তারাও বিভিন্ন জিনিস এই বাক্সে রাখতে পারবে।

যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক সংকটে 'একাত্মতা কর্নার'-এ সংগৃহীত বিভিন্ন জিনিস বিতরণ করবে। এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তোমরা তোমাদের চারপাশের মানুষ, প্রকৃতির প্রতি সদয় ও সহমর্মী হয়ে উঠবে। আর মনে রেখো একজন নৈতিক ও মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ যীশুখ্রীষ্টের শিক্ষা অনুসরণ করে পরিবার, সমাজ ও প্রকৃতির জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে।

 

শিক্ষার্থীরা সকলে মিলে 'একাত্মতা কর্নার'- এর বাক্সে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করছে।

 

Content added || updated By
Promotion